যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর জম্মু-কাশ্মীরে ফিরেছে শান্তি। অবশেষে আতঙ্ক ভুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
শনিবার শ্রীনগরের বাসিন্দা ফিরদৌস আহমেদ শেখ বলেন, ‘আমার একমাত্র ভয় ছিল ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে পারে। আমি প্রার্থনা করি আমাদের সন্তানদের যেন এমন সময় আর দেখতে না হয়। সৃষ্টিকর্তা এখন আমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন।’ আল-জাজিরা।
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত-পাকিস্তান। ২২ এপ্রিল সেই ঘটনার পর ২৪ এপ্রিল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলাগুলি শুরু হয়। ৭ মে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে ভারত। এরপর থেকে দুইদেশের মধ্যে সবাত্মক যুদ্ধ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
যুদ্ধবিরতির পর শ্রীনগরের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী রুমাইসা জান বলেন, ‘কী ঘটছে তা নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। এত প্রাণহানির পর এটিই সবচেয়ে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত। আমরা শান্তি চাই এবং এই সমস্ত শত্রুতার অবসান চাই।’
এদিকে এই প্রতিবেদন লিখার ঘণ্টা কয়েক আগেও দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে খাবার মজুদের হিড়িক। অনেকেই নিত্যপণ্য বেশি করে কিনে বাড়িতে মজুত করেছেন।
শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয়রা বিশেষ ট্রেনে এলাকা ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শুক্রবার লাহোরে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষ খাবার, রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আর ওষুধ সংগ্রহ করছেন।
এ পরিস্থিতিতে কালোবাজারি ও কৃত্রিমভাবে দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। লাহোরের ৩৪ বছর বয়সী বাসিন্দা আরুশা রামিজ বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের জন্য এক মাসের মুদিপণ্য সংগ্রহ করে রেখেছি। মাংস, আটা, চা, তেল, ডাল কিনেছি। ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত অর্থও তুলে রেখেছি।’
লাহোরে একটি ফার্মেসি চালান মোহাম্মদ আসিফ। ৩৫ বছর বয়সী আসিফ বলেন, ‘অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এখন গ্রাহক বেড়ে গেছে। অনেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রাখছেন। এ কারণে প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-অ্যালার্জি, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’
অনেকটা একই রকমের পরিস্থিতি ভারতে। পাঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা পঙ্কজ শেঠ বলেন, ‘কাল বাজার খোলা থাকবে কি না, আমরা জানি না…আমার বাড়িতে সন্তান ও নাতি-নাতনিরা আছে। তাই আমাকে কিনে রাখতে হবে।’
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকার অনেকেই আত্মীয়স্বজনের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে অনুরোধ করছেন।
অমৃতসরে নার্স হিসাবে কর্মরত নভনীত কউর বলেন, ‘আমার খালা থাকেন আটারি এলাকায়। তিনি আমাকে তার জন্য আটা নিয়ে যেতে বলেছেন। কারণ, সেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’
শুধুমাত্র খাবার নয়, নিরাপত্তার ভয়ে অনেকেই রাত কাটাচ্ছে বাংকারে। ৪৩ বছর বয়সী মঞ্জুর আহমেদ থাকেন পাকিস্তানের নীলম উপত্যকার জুরা বান্দি গ্রামে।
তিনি বলেন, ‘আশপাশের পাথুরে পাহাড়ে আমরা বাংকার খুঁড়েছি। মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলার পর থেকে আমরা এসব বাংকারে থাকছি।’
স্থানীয় পুলিশও নিশ্চিত করেছে, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ রাতে বাংকারে আশ্রয় নেন। ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা অমনপ্রীত ধীল্লন (২৬)।
অমনপ্রীত জানান, সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে তাদের গ্রাম। সেখানকার অনেকেই নারী ও শিশুদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও এটা ভাবছি…আমাদের গ্রামেও হামলা হতে পারে।’ ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি জেলার কয়েকজন বলেন, সেখানকার কয়েকটি বাড়িতে গোলা পড়েছে। তাই ভয়ে অনেক পারিবার রাতের বেলা বড় পাথরের আড়ালে কিংবা বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছেন। উরির বারামুল্লা শহরের বাসিন্দা বশির আহমদের বয়স ৪৫ বছর ছুঁয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জীবনে কখনো এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখিনি। গত রাতে গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষ শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো ছেড়ে চলে গেছেন। কিছু মানুষ বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্ন।’