মা’কে স্মরণ করে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। যদিও সন্তানের জন্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানাতে ঘটা করে দিবসের প্রয়োজন হয় না তবুও মায়ের জন্য জমানো ভালোবাসা প্রকাশে সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’।
আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে আজ রবিবার বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিবসটি আসে, চলেও যায়। এই দিনটিতে মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করেন সন্তান, তাকে ধন্যবাদ জানান, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেন। মা দিবসটির শুরু হয়েছিল তা হয়তো অনেকের জানা নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক মা দিবসের আদ্যোপান্ত।
মা দিবসের শুরুটা ১৯ শতকের গোড়ার দিকে, আমেরিকাতে। দিবসটির প্রবক্তা অ্যানা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে মায়েদের সচেতন করা। তিনি আমেরিকার বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশনের বাসিন্দা ছিলেন। সারা জীবন অনাথদের সেবায় জীবন ব্যয় করেছেন অ্যান মেরি রিভস।
১৮৭৬ সালের কোনো এক রবিবার মা অ্যান তার প্রার্থনা শেষে বলেছিলেন, এমন একটা সময় যদি আসে, যেদিন কেউ একজন ‘মা দিবস’ নামে কোনো দিবস তৈরি করবে! কথাটি ১২ বছর বয়সী ছোট্ট অ্যানার মনে গেঁথে যায়। ১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। অ্যানের মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি অ্যানা। একের পর এক চিঠি পাঠান তিনি প্রশাসনের কাছে। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালন করা। দিনটি ছিল অ্যানার মায়ের মৃত্যুদিনের সবচেয়ে কাছের রবিবার। এর কয়েক বছরের মধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে শুরু করে।
অবশেষে অ্যানার কয়েক বছরের চেষ্টায় আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় মা দিবস। ১৯১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষিত হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। বর্তমানে ৪০টিরও বেশি দেশ ওই উৎসব পালন করে থাকে।
দেশে দেশে ‘মা’:
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যকার উচ্চারণগত এই সাদৃশ্য কীভাবে ঘটল, তা এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেক ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।
‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা আগে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে লাতিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উৎপত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ‘মা’কে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। আর সবগুলো শব্দের শুরুতেই ব্যবহৃত হয়েছে ‘এম’ অথবা ‘ম’ বর্ণটি। মাকে জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, হিন্দি ভাষায় ‘মা’, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং বাংলা ভাষায় ‘মা’ বলে ডাকা হয়।